প্রকৃতি ভ্রমণে একদিন

তখন গ্রীষ্মকাল ছিল। আজ থেকে পাঁচ বছর আগে মধ্য-দক্ষিণ নরওয়ের পর্বত ঘেরা প্রকৃতি ভ্রমণে গিয়েছিলাম আমার এক বন্ধুর নিমন্ত্রনে। সেদিনের শেষ বিকেলে বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিজেকে স্বর্গলোকে আবিষ্কার করেছিলাম এই দেখে যে, সেখানে সময় অসময়ে মেঘেরা আসে পর্বতকে আলিঙ্গন করতে। আমি মেঘের মাঝে হেটে ছিলাম পর্বতের গা বেয়ে। চারিদিকে ঝর্ণার কলকলে ধ্বনি, পাখিদের কিচিরমিচির আর ভূপৃষ্ঠের সবুজ লতা-গুল্মে পুষ্পরাজিরা মেতেছিলো আপন রূপ প্রদর্শনের প্রতিযোগিতায়। সে এক অপরূপ দৃশ্য।

নরওয়েজীয় বন্ধুর বাংলো থেকে গাড়ি চালিয়ে প্রায় এক ঘন্টার পথ পেরিয়ে আমরা গিয়েছিলাম মালভূমি পরিভ্রমনে। মালভূমির উপরেই রয়েছে এক পর্বতমালা। এই অঞ্চলটিকে ঘিরে একাধিক পৌরাণিক গল্পকাহিনী প্রচলিত আছে। এই স্থানকে নরওয়েজিয়ান ভাষা বলা হয় ''Jotunheimen'' বাংলায় ভাবার্থ দাঁড়ায় ''দৈত্যদের নিবাস''।

ভূপৃষ্ঠে ছোট বড় অসংখ্য পাথর, পানির কলকল ধ্বনি শুনতে পাচ্ছিলাম, পর্বতের গা বেয়ে ছোট বড় অসংখ্য পানির ধারাও চোখে পড়ছিলো। কোথাও পানি জমে ছোট্ট ডোবা বা পুকুরের মত সৃষ্টি হয়েছে আর সেই পানিকে কেন্দ্র করে একধরণের পাখির আনাগোনা চোখে পড়ার মত।
প্রায় জনমানব শূন্য অঞ্চল, আমার খুব ইচ্ছে হয়েছিল পর্বতারোহন করতে। তাই হাটতে হাটতে পর্বত বেয়ে উঠেছিলাম ভূপৃষ্ঠ থেকে আনুমানিক ১৩০০ মিটার উপরে। যতই উপরের দিকে উঠছিলাম তাপমাত্রা ততই গরম অনুভূত হচ্ছিলো, আমি প্রচন্ড ঘামছিলাম। উঠতে উঠতে আমি একটা পর্বতের চূড়ায় উঠেছিলাম। পর্বতের চূড়ায় গরম তাপমাত্রা মধ্যে তুষারের অস্তিত্ব আবিষ্কার করলাম। পর্বতের গা বেয়ে ঠান্ডা জমাট বাঁধা তুষার।

প্রথম প্রকাশ আমার ব্লগে
http://blog.cartoonistarif.com/2016/07/75675.html

উত্তরের আলো

২০১৫ সালের নভেম্বর মাসের শেষের দিকে উত্তর নরওয়েতে গিয়েছিলাম একটি সংস্থার আমন্ত্রণে।
তখন প্রচন্ড ঠান্ডা, মাইনাস ৩০ ডিগ্রির মতো ঠান্ডা। সংস্থার আমন্ত্রণে রাশিয়ান এক কমিক আর্টিস্টও এসেছিলেন। সারা বিকেল তিনি এবং আমি প্রচন্ড ঠান্ডা আর তুষারের মাঝে ঘুরে বেড়ালাম, এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে। 
রাতের খাওয়ার পর সংস্থার একজন জানালেন যে আজ আকাশে উত্তরের আলো দেখা যাচ্ছে, দেখতে চাইলে বাইরে আসতে পারেন। উত্তরে এলাম আর উত্তরের আলো দেখবো না তাই কি কখনো হয়? আমি আর রাশিয়ান যুবতী রাত দশটার দিকে বের হলাম উত্তরের আলো দেখবো বলে। প্রচন্ড ঠান্ডা আর বরফ জমে রাস্তা পিচ্ছিল হয়েছিল আমরা সাবধানে হাটতে হাটতে সাগর তীরে গিয়ে আকাশের দিকে তীর্থের কাকের মতো তাকিয়ে রইলাম আধা ঘন্টার মতো, ঠান্ডায় আমরা যেন জমে যাচ্ছিলাম এমন অবস্থা প্রায়। এরপর হঠাৎ আকাশে দেখা মেললো উত্তরের আলো। প্রায় দশ মিনিট পর সবুজ রঙের আলোর আভা আঁধারে মিলিয়ে গেলো আর আমরা হোটেলে ফিরে এলাম।

আরিফুর রহমান,
নরওয়ে

ছবি: আলেজান্দ্রো গঞ্জালেজ

পুঁথি পরিসংখ্যান