ভালো লাগা এবং ভালোবাসা শব্দ দুটো “ভালো” দিয়ে শুরু হলেও এর অর্থ কিন্তু এক নয়। শব্দ দুটি সম্পূর্ণ পৃথক এবং ভিন্ন অর্থকে নির্দেশ করে।
কেউ কেউ বলে থাকে প্রথম দেখায় ভালোবাসা হয়, আমি এই বিষয়ে সম্পূর্ণ দ্বিমত। আমি মনে করি প্রথম দেখায় যেটা হয় সেটা হলো ভালো লাগা, মুগ্ধতা বা আকর্ষণ, তা ভালোবাসা নয়।

ফুল এবং ফল এক বিষয় নয়, ফুল হলো ফলের পূর্ণতার কারণ, ফুল হলো ফলের ভিত্তি, তবে তা একটি নিদিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই ফলে রূপ লাভ করে থাকে।
আমরা জানি ফুল থেকেই ফল হয়, এবং যে গাছে ফুল আসে না সে গাছে ফল আসে না। কোন কোন গাছে ফুল আসলেও সব ফুল আবার ফলে পরিণত হতে পারে না, পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে কোন কোন ফুল অকালেই ঝরে যায়, ফলে রূপ পেলেও বিকশিত হওয়ার আগেই তা ঝরে যায়। এ ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে ফুল থেকে ফলে পূর্ণতা পাওয়ার সৌভাগ্য সব ফুলের হয় না। এখানে ভালো লাগা হলো ফুল স্বরূপ, এবং ভালোবাসা হলো ফল স্বরূপ।

আমরা অনেক সুবর্ণ এবং সুগন্ধময় ফুল দেখে থাকি যা প্রথম মূহূর্তেই আমাদের চিত্তকে আকর্ষণ করে, আনন্দিত করে বা ভালো লাগে, এ ক্ষেত্রে সেটি প্রথম দেখায় ভালো লাগা, মোটেও প্রথম দেখায় ভালোবাসা নয়।
দুধ একটি নিদিষ্ট প্রক্রিয়া এবং সময়েই তা দইয়ে পরিণত হয়, অনুরূপ ভালো লাগা থেকে ভালোবাসার বেলাতেও তাই।

ব্যক্তি বা বস্তুর বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে আমাদের মনে ভালো লাগা বা আকর্ষণ সৃষ্টি হয়, ক্রমান্বয়ে তা ভালোবাসায় রূপ ধারণ করে। ভালোবাসা হলো নিদিষ্ট প্রক্রিয়ায় ভালো লাগার ক্রমবিকাশের ফল।

কোন নিদিষ্ট ব্যক্তি বা বিষয় সুশ্রী হলে তাতে মানুষের মনে ভালো লাগার আকুলতা সৃষ্টি হয়, পাশাপাশি উক্ত ব্যক্তি বা বিষয়ে যদি মনে ভয় বা আতংক অবস্থান করে, এক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি বা বিষয়ের সাথে ভালোবাসা প্রতিষ্ঠা পায় না। অর্থাৎ মানুষ তাকেই ভালোবাসে যাকে সে ভয়হীন বিশ্বাসভাজন বন্ধু এবং প্রিয়জন মনে করে।


বাগানের কোন ফুলে সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হওয়ার পর ব্যক্তি যখন সেটাকে গাছ থেকে ছিঁড়ে ঘরে এনে ফুলদানীতে সাজিয়ে রাখে, ব্যক্তির এহেন কর্মকান্ড তখন ফুলের প্রতি ব্যক্তির ভালো লাগার বা মুগ্ধতার প্রকাশ ঘটায়।
ফুলটাকে তার শাখা থেকে বিচ্ছিন্ন করলে একটা সময় শেষে সেটি মারা যাবে, এই ভেবে বা ফুলের স্বার্থের কথা ভেবে যখন বাগানেই রেখে ফুলের প্রতি আরো বেশি যত্নবান হয় তখন ব্যক্তির কর্মকান্ড ফুলের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ ঘটায়।

ভালো লাগা হলো ব্যক্তির আত্ম কেন্দ্রীক অনুভূতি, এবং ভালোবাসা হলো ব্যক্তির মনে বস্তুর স্বার্থ কেন্দ্রীক অনুভূতি।

মানুষ যে ব্যক্তি বা বস্তু-কে প্রকৃতার্থেই ভালোবাসে, মানুষ তাকে সচেতনে বা সেচ্ছায় কষ্ট দিতে পারে না বা তার ক্ষতির কারণ হতে পারে না। ভালোবাসা মানুষকে দ্বায়িত্বশীল হতে শেখায়, ভালোবাসা ব্যক্তি বা বস্তুকে যত্ন এবং সম্মান করতে শেখায়।

আরিফুর রহমান, দ্রবাক, নরওয়ে।